ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত - ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলে
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তুলে ধরবো সেটি হচ্ছে ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত - ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জরুরি গুলো জেনে না থাকেন তাহলে
আজকের পোস্টটি আপনার জন্য অনেক উপকারে আসবে। কেননা আজকের পোস্টে আমরা ইশরাকের
নামাজ এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সাজানোর চেষ্টা করেছি।
প্রিয় বন্ধুরা, আপনি যদি মূল্যবান সময়টুকু কিছুক্ষণ সময় অপচয় করে এই
পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়েন, তাহলে ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত, ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম?
পাশাপাশি ইশরাক কি, ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম, ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত,
ইশরাকের নামাজ পড়ার সময় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন। আশা করি
ইশরাকের নামাজ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জেনে ইশরাকের নামাজের সময় কাজে আসবে।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ
উপস্থাপনা
প্রতিটা নামাজই ফজিলতসম্পন্ন। মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন
শুধুমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। আমরা সাধারনত পাচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম জানি
কিন্তু অনেকেই ইশরাকের নামাজ সম্পর্কে জানি না। তাদের ক্ষেত্রে ইশরাকের নামাজ
সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি।
যাদের ইশরাকের নামাজ পরার ইচ্ছা বা আগ্রহ আছে কিন্তু ইশরাকের নামাজ কয় রাকাত পড়তে
হয় বা কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয় কিংবা এই নামাজের ফযিলত কতটুকু এই বিষয়ে জানেন না
তারা আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে জরুরি তথ্যগুলো জেনে নেওয়ার অনুরোধ রইলো। তাহলে
আসুন বেশি কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক। আমরা প্রথমে ইশরাক কি সেই
সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিব।
ইশরাক নামাজ
ইশরাক অর্থ হচ্ছে আলোকিত হওয়া। ইশরাকের নামাজ পড়তে হয় ফজরের নামাজের পরে সূর্য
উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করে সূর্য উদয়ের পর। ওলামায়ে কেরামদের মতে সূর্য উদয়ের দশ
থেকে পনের মিনিট পর অথবা সূর্য উদয়ের কুড়ি থেকে পচিশ মিনিট পরে ইশরাকের নামাজ
পড়তে হয়।
আমাদের প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য উদয়ের সাথে
সাথে ইশরাকের নামাজ পড়তেন না বরং কিছুক্ষন সময় অপেক্ষা করার পরে আদায় করতেন। আশা
করি ইশরাক নামাজ কি সেই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এবার আসুন ইশরাকের নামাজ কয়
রাকাত বা কয় রাকাত নামাজ নামাজ পরতে হয় সেটা জেনে নেই।
ইশরাক নামাজ কত রাকাত
ইশরাক নামাজ পড়ার আগে কয় রাকাত নামাজ পড়তে হয় সেটা জেনে নিতে হবে। ইশরাকের
নামাজ দুই রাকাত পড়তে হয়। আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করল। অতপর সূর্য উদয় হওয়া
পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করল, কিছুক্ষন পরে দাঁড়িয়ে দুই রাকাআত
ইশরাকের নামাজ পড়ল; সে একটি হজ ও ওমরাহ করার সাওয়াব তার আমলনামায় নিয়ে ফিরে
গেল।’ (তাবারানি, আত-তারগিব)।
ইশরাকের নামাজের সময়
সূর্যোদয়ের পর হতে সূর্য মধ্য আকাশে আসার পূর্ব পর্যন্ত সময়কে 'দোহা' বলা
হয়। এ সময়ের মধ্যে ২ থেকে ১২ রাকাআত নামাজের কথা হাদিসে এসেছে। সূর্য উদয়ের
পর যে ২ বা ৪ রাকাআত নফল নামাজ পড়া হয় তাকে ইশরাকের নামাজ বলে। এই নামাজের
মাধ্যমে এক হজ ও উমরার সওয়াব পাওয়া যায়।
ইশরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়
আমরা এ পর্যায়ে জেনে নেব যে ইসরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয় সেই
সম্পর্কে। মহান আল্লাহ তাআলা প্রতিটা মুসলমানের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ
করেছেন। এছাড়াও কিছু নফল সুন্নত নামাজ হয়েছে যেগুলো করলে অনেক সওয়াব পাওয়া
যায়। ফরজ কাজের মধ্যে নামাজ হচ্ছে জান্নাতের চাবিকাঠি। এজন্য আমাদের
সবাইকে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। যত কাজই থাকুক না কেন
নামাজের কোন বিকল্প রাস্তা নেই।
📌আরো পড়ুন 👉 হিংসা থেকে বাঁচার উপায়
ইশরাকের নামাজে নির্দিষ্ট কোন সূরা পড়ার বিধান নেই। আপনি চাইলে যে কোন
সূরা বাকারা দিয়ে এই সালাত আদায় করতে পারেন। আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন
যারা নামাজ পড়তে অলসতা বোধ করেন। এটা মুসলমান জাতির জন্য মোটেও ঠিক নয়। এই
দুই দিনের দুনিয়াতে মহান আল্লাহ আমাদেরকে একমাত্র তার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি
করেছেন।
আমরা মুসলমান জাতি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহকে
স্মরণ করে থাকি। এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে নামাজ আদায় করার
ফলে আমাদের শরীরের কোন ধরনের রোগ বালাই জন্মাতে পারেনা। নামাজ আমাদের দেহের এক
ধরনের ব্যায়ামের মতো হাটু মাজা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা কমাতে সাহায্য
করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যেভাবে আল্লাহর হুকুম পালন এবং
সুন্নতগুলো মেনে চলতে বলেছেন সেভাবে চলতে পারলে তিনি আমাদের শাফায়েত করবেন
কিয়ামতের দিনে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি আমাদের কে নফল ও
সুন্নত নামাজও পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে।
ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম
ইশরাক হচ্ছে নফল নামাজ। এই নামাজ অন্যান্য নামাজের মতো করে দুই রাকাআত করে আদায়
করতে হয়। এই নামাজের জন্য সুস্পষ্ট বা নির্দিষ্টভাবে আলাদা কোনো নিয়ম নেই।
শুধু ‘আল্লাহু আকবার’ বলে শুরু করলেই হবে। আর দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত নামাজ
আদায় করা।
এই নফল নামাজের সুনির্দিষ্ট কোন রাকাআত সংখ্যার উল্লেখ না থাকলেও অনেকে ২ রাকাআত
থেকে শুরু করে ৮ রাকাআত পর্যন্ত পড়েন। আবার অনেক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ইশরাকের
নামাজ ২ রাকাআত করে শুরু করে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়।
তবে আমাদের প্রিয়নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইশরাকের
নামাজ দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত পড়তেন। সুতরাং প্রত্যক মুমিন মুসলমানদের
উচিত, ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ পনের থেকে
বিশ বা পচিশ মিনিট পর দুই দুই রাকাআত করে মোট চার রাকাআত ইশরাকের সালাত আদায়
করা। আমাদের প্রিয় নবি রাসূল (সাঃ) এর ঘোষিত ফজিলত ও পেতে হলে অবশ্যই এ নফল
নামাজের আমল অব্যাহত রাখতে হবে।
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত
ইশরাকের নামাজ ফজিলত একাধিক হাদিসে উল্লেখ আছে- হজরত আনাস ইবনে মালেক
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাআতে সাথে
ফজর নামাজ আদায় করার পর সূর্য উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করল এবং ওখানে বসে বসেই
আল্লাহর জিকির করল। তারপর ইশরাকের দুই রাকাআত সালাত আদায় করল। সে যেন পূর্ণাঙ্গ
হজ ও ওমরা করার সমান সাওয়াব পেল।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
📌আরো পড়ুন 👉 তাওহীদ শব্দের অর্থ কি? তাওহীদ কাকে বলে
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতের সহিত আদায় করল। তারপর
সেখানে সূর্য উঠা আগ পর্যন্ত সেখানে বসে মহান আল্লাহর জিকির করল; অতপর দাঁড়িয়ে
দুই রাকাআত ইশরাকের নামাজ আদায় করল; সে যেন একটি হজ ও ওমরাহ করার মতো সাওয়াব
নিয়ে ফিরে গেল। (তাবারানি, আত-তারগিব)। আশা করি ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত কি
তা জানতে পেরেছেন।
ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত
মূলত ইশরাকের নামাজের নির্দিষ্ট কোনো নিয়ত হয় না। শুধু মাত্র নিয়তের সময় মনে
মনে অন্য নামাজের নিয়তের মত “হে আল্লাহ আপনার সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত
নফল নামাজ অথবা ইশরাকের দুই আকাত নামাজ আদায় করছি’ এই বলে নামাজ শুরু করলেই হবে।
সাধারনত ফজরের নামাজ আদায়ের পরে আপনি তো ইশরাকের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যেই অপেক্ষা
করছেন।
আর এই নফল নামাজের জন্য নিজেকে তৈরি করছেন। আবার নামাজে সময় দারিয়েছেন ইশরাকের
নামাজ পড়ার উদ্দেশ্য নিয়েই। তাই আপনার এমনিতেই নামাজের নিয়ত সম্পন্ন হয়ে যায়।
তাহএ আশা করি ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত কি এবং কিভাবে ইশরাকের নামাজের নিয়ত
করতে হয়। তা জানতে পেরেছেন। এবার আমরা জেনে নিব কখন ইশারকের নামাজ পড়া যাবে না।
কখন ইশারকের নামাজ পড়া যাবে না
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা জানতে চায় যে সাধারণত ইশরাকের নামাজ কখন
পড়া যাবে না? এ প্রশ্নের জবাব হচ্ছে দুই ঈদের আগে ইসরাকের নামাজ পড়া যাবে না।
ঈদের নামাজের আগে ইশরাকের নামাজ পড়া যাবে না।
এছাড়া যখন নফল নামাজ পড়া যাবে না তখন ইশরাকের নামাজও পড়া যাবে না। কেননা
ইশরাকের নামাজ হল নফল নামাজ। আবার ইশরাকের নামাজ ফজর এর পরে সূর্য যতক্ষণ না
উদয় হচ্ছে তার আগে পড়া যাবে না। আশা করছি আপনার প্রশ্নের উত্তরটি জানতে
পেরেছেন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQs)
ইশরাকের নামাজ কয় রাকাআত পড়তে হয়
ইশরাকের নামাজ ২ রাকাআত রাকাত পড়তে হয় । কিন্তু আমাদের রাসূল (সাঃ) ইশরাকের
২ রাকআত এর সাথে আরও ২ রাকাত মোট ৪ রাকআত নামাজ আদায় করতেন।
ইশরাকের নামাজ সুন্নত না নফল
ইশরাক হচ্ছেচ নফল নামাজ।
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফযিলত কি?
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফযিলত হচ্ছে একটি হজ ও ওমরাহ করার মতো সাওয়াব পাওয়া যায়।
ঈদের দিন কি ইশরাকের নামাজ পড়া যায়?
না, ঈদের দিন বা ঈদের নামাজের আগে নফল নামাজ পড়া যাবে না।
ইশরাকের নামাজ সম্পর্কে লেখকের মতামত
আশা করছি আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে বিভিন্ন অজানা তথ্যগুলো জানতে সক্ষম
হয়েছেন। প্রিয় বন্ধুরা, আমরা ইতিমধ্যে ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত , ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম এবং ইশরাক নামাজ সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে
আলোচনা করেছি। আশা করি, এ বিষয়ে জেনে আপনারাও উপকৃত হয়েছেন।
ইশরাক নামাজ সম্পর্কিত আজকের পোষ্টটি আপনার ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই প্রিয়
জনদের শেয়ার করবেন। স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন ইসলামিক সম্পর্কিত অন্যান্য
গুরুত্বপূর্ণ পোষ্টসমূহ পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ভালো থাকবেন
ধন্যবাদ।
ট্রিক্সভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url