মাঙ্কিপক্স ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় - মাঙ্কিপক্স এর লক্ষণ
করোনা ভাইরাস আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই এবার সারা বিশ্বে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে
মাঙ্কিপক্স। প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি, আপনারা পরিবার পরিজনদের নিয়ে
সকলেই সুস্থ সবল আছেন। আজকের আমরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়
টপিকে আলোচনা করব সেটি হচ্ছে
মাঙ্কিপক্স এর লক্ষণ ও মাঙ্কিপক্স ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত
সাজিয়েছি। আপনি কি
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য উপকার
হতে চলেছে।
আপনি যদি এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে
পড়েন, তাহলে তাহলে তাহলে মাঙ্কিপক্স এর লক্ষণ ও মাঙ্কিপক্স ভাইরাস কীভাবে
ছড়ায় এই সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স
কী, এমপক্সের কি টিকা আছে?, এমপক্স যেভাবে প্রতিরোধ করবেন, এমপক্স
যেভাবে প্রতিরোধ করবেনইত্যাদি সহ এই সম্পর্কে আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ও
প্রয়োজনীয় যাবতীয় অজানা তথ্যগুলো জেনে নিতে পারবেন।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ
উপস্থাপনা - মাঙ্কিপক্স ভাইরাস
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবতায় বিগত ২ বছরে ২ বার জরুরি অবস্থার ঘোষণা
হয়েছে যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে (WHO)। আফ্রিকা মহাদেশে পর এবার ইউরোপে মহাদেশে
এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে । এছাড়াও এশিয়া মহাদেশেও এর সংক্রমণ
দেখা গেছে। এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থা ঘোষণা
করেছে।
এ রোগটি সম্পর্কে এখন অবদি অনেকেইবিস্তারিত জানেন না। এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স কী,
এটি কীভাবে ছড়ায়, এর লক্ষণসহ বিস্তারিত জানিয়েছেন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা
ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। চলুন তিনি
এইগুলো বিষয়ে কি কি বলেছেন তা বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কী
এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স যেটাই বলেন এটি হচ্ছে একটি ভাইরাসজনিত রোগ। যা আমাদের
দেশে জলবসন্ত দেখা যায়। এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স আলাদা রকমের একটি পক্স ভাইরাস।
এমপক্সের প্রধান ২টি ধরন আছে প্রথমটি হল ক্লেড ১ এবং দ্বিতীয়টি ক্লেড ২
এই ২ ধরনের মধ্যে আবার সাব বিভাগ হিসেবে এ, বি রয়েছে।
এই ভাইরাস অনেক আগে থেকেই ছিল, মাঝখানে কমে অনেকটা কমেছিল। সম্প্রতি এই
ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আবার বাড়তে শুরু করেছে। আফ্রিকা মহাদেশের কঙ্গোতেই এই
ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখন ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন
দেশেও ছড়াচ্ছে। সংক্রমণ মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ২০২২ সালের পর
এমপক্স নিয়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
মাঙ্কিপক্স এর লক্ষণ
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা মাঙ্কিপক্স এর লক্ষণ সম্পর্কে জানার
জন্য গুগলের কাছে প্রতিনিয়ত সার্চ করে থাকেন। কিন্তু তারা হয়তো সঠিক তথ্য
খুঁজে পান না। মূলত তাদের জন্যই আজকের পোস্টের এই অংশে মাক্সি পক্সের লক্ষণ
সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবো। মাক্সি বক্সের লক্ষণ গুলো হচ্ছেঃ
📌আরো পড়ুন 👉 প্রেগন্যান্সি কতদিন পর বুঝা যায়
- শরীরে খুব ব্যথা হয়
- জলবসন্তের চেয়েও বেশি ব্যথা হয়
- পায়ের সন্ধিস্থল ফুলে যায়,
- গলা ফুলে যায়,
- লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায়
- প্রচূর ব্যথা ও ফুলে যাওয়ার ফলে জ্বর হওয়া।
- ত্বকে পানি ভর্তি ফুসকুড়ি বা ফোসকা হয় এবং
- সেখানে চুলকানি ও ব্যথা হয়।
এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স এমনিতেই চলে যায়। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা খুব বেশি
অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নানান ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হত্যে
পারে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাই রোগ নিয়ে কখনোই অবহেলা করা যাবে না।
আর যদি উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব একজন বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া। আশা করছি মাক্সি পক্সের
লক্ষণ গুলো জানতে পেরেছেন। এবার চলুন মাক্সি পক্স ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় সেই
সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়
এমপক্স ভাইরাসের উৎপাদন হয়েছে মূলত বন্যপ্রাণী থেকে, তাই এটিকে বলা যায়
প্রাণীবাহিত রোগ। যারা বন্যপ্রাণী শিকার করতে যাইতেন তারাই মূলত এই ভাইরাসে
সংক্রমিত হতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে এই ভাইরাসের সংখ্যে দিনের পর দিন
বেড়েই চলেছে যার ফলে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস বিভিন্ন কারণে ছরাতে
পারে যেমনঃ
- সংক্রমিত ব্যক্তির খুব কাছাকাছি থাকলে এর সংক্রমণ ঝুঁকি থাকে।
- এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির পোশাক ব্যবহার করলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
- গর্ভবতী নারীরা এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার সন্তানও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হইতে পারে।
- রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা ইনজেকশনের সুঁই অন্য কারো দেহে ব্যবহার করেলেও এমপক্স হতে পারে।
- এমপক্স শুকানোর পরে ফোসকার আবরণ যদি ছড়িয়ে পড়ে, সেখান থেকে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।
- এই ভাইরাস মানুষ মানুষে ছড়াচ্ছে শারীরিক বিভিন্ন সংস্পর্শের মাধ্যমে যেমন সংক্রমিত ব্যক্তিকে র্স্পশ করা, চুমু দেওয়া, যৌন সম্পর্ক ইত্যাদি থেকে এটি ছড়াতে পারে।
এছাড়াও এমপক্স আক্রান্ত কোন বন্যপ্রাণী শিকার করলে , চামড়া তোলা, মাংস কাটা
কাটি করা এমনকি রান্নার সময়, কম তাপমাত্রায় বা আধা সিদ্ধ রান্না করে খাবার
খেলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে। আমাদের বাংলাদেশে বন্যপ্রাণীর শিকার
হতে দেখা যায় না। কিন্তু এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত প্রাণীর কাছে গেলেও এই
ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমপক্সের কি টিকা আছে?
আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা জানতে চাই যে এই মাক্সি পক্স এর টিকা বা
ভ্যাকসিন রয়েছে কিনা। এমপএক্সের অবশ্যই টিকা আছে। তবে যারা সবচেয়ে বেশিতে
ঝুঁকিতে রয়েছেন বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে সব সময় থাকছেন শুধুমাত্র
তারাই এই টিকাটি পেতে পারে। তবে সবচেয়ে মুখ্য বিষয় হচ্ছে যাদের আসলে টিকা
প্রয়োজন তাদের কাছে টিকা পৌঁছানোর মতো পর্যাপ্ত তহবিল নেই।
এমনকি ডব্লিউএইচও আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত না হওয়া অবদি এটি জরুরি ভিত্তিত্র
ব্যবহারের জন্য সম্প্রতি ওষুধ প্রস্তুতকারকদের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এখন
আফ্রিকার সিডিসি মহাদেশব্যাপী ‘জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন,
এজন্য আশা করা যায় এর প্রতিক্রিয়ায় সরকা্র ভালভাবে সমন্বয় করতে পারবে বলে
আশাবাদী। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চিকিৎসা সরবরাহ পরিমাণে
বাড়াবে।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে সবচেয়ে ঝুঁকিতে কারা রয়েছে?
সবচেয়ে বেশি কারা এই ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছেন সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা
পরিস্থিতি বিবেচনা করে গবেষণা করছেন। তাদের মধ্যে অল্পবয়সী বাচ্চারা থাকতে
পারে। কেননা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল যার ফলে এই রোগের
বিরুদ্ধে লড়াই করাটা তাদের জন্য বেশি কঠিন হয়ে যায়।
কিছু কিছু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, ছোট বাচ্চারা যেভাবে ঘনিষ্ট ভাবে বাইরে
খেলাধুলা করে ও একে অপরের সাথে মেলা মেশে তার কারণে ঝুঁকিতে থাকতে পারে।
এমনকি ৪ দশকেরও বেশি সময় আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া গুটিবসন্তের ভ্যাক্সিনের তারা
পাচ্ছে না। যার ফলে আগের ভ্যাকসিনের পাওয়ার কারণে যারা বয়স্ক রয়েছেন তারা
হয়তো কিছুটা সুরক্ষিত রয়েছেন।
যারা দুর্বল রয়েছেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের এই
রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে। এই ভাইরাস থেকে রেহায় বা
মুক্তি পেতে হলে এমপক্সে আক্রান্ত কারও সাথে কিংবা ঘনিষ্ট কারও সাথে খুব একটা
মেলা মেশা বা যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে হবে এবং এই ভাইরাস যদি আশেপাশের কারও হয়ে
থাকে, তাহলে তাকে সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।
সব ক্ষত স্থান ভালোমতো সেরে না যাওয়া অবদি এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিকে
অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা জরুরি। WHO বলছে, সুস্থ হওয়ার পরে মিনিমাম ১২
সপ্তাহ পর্যন্ত শারীরিক সম্পর্ক করার সময় সতর্কতা হিসেবে কনডম ব্যবহার করতে
হবে। আশা করছি, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে সবচেয়ে ঝুঁকিতে কারা রয়েছে? সেই বিষয়ে
বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, এমপক্স যেভাবে প্রতিরোধ করবেন সেই
বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
এমপক্স যেভাবে প্রতিরোধ করবেন
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা এমপক্স ভাইরাসকে কিভাবে প্রতিরোধ করবে সেই
বিষয়ে অবগত নন। তাই আমরা আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে পোষ্টের এই অংশে আপনাদের
অবগত করব। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক। সাধারনত আপনি যদি এমপক্স
বা মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত হন তাহলে সবাইকে তা জানাতে হবে।
কেউ যেন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসে সেই দিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে
হবে। চিকিৎসক বা অন্য কেউ আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসলে অবশ্যই তাকে নিজের
রক্ষাত্রে গ্লাভস ও মাস্ক পরিধাণ করতে হবে এবং যথাসম্ভব সুরক্ষা নিয়ে এই
রোগীর চিকিৎসা দিতে হবে। আক্রান্ত রোগীর ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিসপত্র ও
পোশাক কখনই কোনোভাবেই ব্যবহার করা উচিত হবে না।
এছাড়া যেই প্রাণী এই ভাইরাসে আক্রান্ত সেই প্রাণীর সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না।
পক্স শুকিয়ে যাওয়ার পর দেহের ফুসকুড়ি গুলো যাতে আশেপাশে কোথাও না পড়ে সেদিকে
লক্ষ্য রাখতে হবে। আক্রান্ত রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া অবদি বাসাতেই
অবস্থান করতে হবে। যতদিন দেহের ফোসকাড় জায়গায় নতুন আবরণ তৈরি না হচ্ছে ঠিক
ততদিন পর্যন্ত।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে মাস্ক পরিধান ক্রতে হবে , শারীরিক দূরত্ব মানতে
হবে। দেহের গুটি বা ফুঁসকুড়িগুলো ভালোমতো ঢেকে রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের
পরামর্শে দেওয়া মলম নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই এই এমপক্সকে
প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সম্পর্কে লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে মাঙ্কিপক্স এর লক্ষণ ও মাঙ্কিপক্স ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় সেই সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য আলোচনা
করেছি। আপনারা এতক্ষণে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে এই সম্পর্কে অবগত হতে
পেরেছেন। তবে এই বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন কিংবা মতামত থাকলে কমেন্ট করে
জানাতে পারেন। আমরা সেই অনুযায়ী কমেন্টের উত্তর দিয়ে দিব।
আমাদের আজকের লেখা মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে
শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে তারাও এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানতে সক্ষম হবেন। বিভিন্ন স্বাস্থ্য
সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে হলে আমাদের সাইটটি নিয়মিত
ভিজিট করতে পারেন।
ট্রিক্সভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url