জয়তুন তেলের উপকারিতা - জয়তুন তেল চেনার উপায়
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠকবৃন্দ আশা করি আপনারা সকলেই ভালোই আছেন। আপনারা হয়তো
অনেকেই জয়তুন ফলের নাম শুনেছেন কিন্তু জয়তুন তেলের উপকারিতা এবং জয়তুন তেল
চেনার উপায় জানা নেই। আপনি কি জয়তুন তেলের উপকারিতা জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের
পোষ্টটি আপনার জন্য। কেননা এই পোষ্টে আমরা জয়তুন তেলের উপকারিতাসহ এর বিভিন্ন
প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় তথ্য আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
আমাদের সাথে আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকেন তাহলে জয়তুন তেলের উপকারিতা
জেনে নেওয়ার পাশাপাশি জয়তুন তেলের পুষ্টিগুণ, জয়তুন তেলের অপকারিতা, জয়তুন তেল
ব্যবহারের নিয়ম, জয়তুন তেলের দামসহ জয়তুন তেলের আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে
নিতে পারবেন। তাই আমার মনে হয় একেবারেই অবহেলা না করে মনোযোগ দিয়ে এই পোষ্টটি পড়ে
জেনে নেওয়া।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা - জয়তুন তেল
যেকোনো তেল আমাদের শরীরের দেহ ও চুলের জন্য একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিচিত।
তেল আমাদের জীবনের সকলেই ব্যবহার করতে হয়। বিশেষ করে রান্না করতে আমাদের সকলেকেই
তেল ব্যবহার করতে হয়। অপরদিকে তেলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকারি পুষ্টিগুণ
যা আমাদের শরীরকে রাখে সুস্থ ও স্বাভাবিক। সকল তেলের মধ্যে জয়তুন তেলের উপকারিতা
অন্যসব তেলের চেয়ে অনেক বেশি।
তাই আপনাকে এই জয়তুন তেলের ব্যবহারের আগে এর উপকারিতা, ব্যবহারের নিয়ম, জয়তুন
তেল চেনার উপায়, জয়তুন তেলের দাম সহ এর পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নেওয়া
খুবই জরুরী। তাহলে চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে বা আপনার মূল্যবান সময়টুকু ক্ষতি না
করে মূল আলোচনায় আসা যাক। আমরা প্রথমে জয়তুন তেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বা এই
তেলের পরিচিতি সংক্ষেপে জেনে নিব।
জয়তুন তেলের পুষ্টিগুণ
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা জয়তুন তেল এর পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে জানতে
চায়। তাই আমরা পোস্টের শুরুতেই আমরা জয়তুন তেলে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে সেই বিষয়ে
তুলে ধরেছি। জয়দিন তেলের পুষ্টির উপাদান হচ্ছে-
- ক্যালরি (১১৯ মিলিগ্রাম)
- মোট চর্বি (১৪ গ্রাম)
- ভিটামিন ই (১.৯ মিলিগ্রাম)
- ভিটামিন কে (৮.১ মাইক্রোগ্রাম)
- স্যাচুরেটেড চর্বি (২ গ্রাম)
- মনোস্যাচুরেটেড চর্বি (১০ গ্রাম)
- পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি (১.৫ গ্রাম) ইত্যাদি।
জয়তুন তেলের উপকারিতা
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কারণে আমাদের দৃষ্টিশক্তি কমে
যায়। নিয়মিত জয়তুন তেল ব্যবহার করলে দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে চোখের
চারপাশে এই তেল ভালোভাবে নিয়মিত মালিশ করতে হবে।
ডায়াবেটিসে উপকারী: জয়তুন তেল ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তাদের জন্যেও অনেক
উপকারী। কেননা এই জয়তুন তেল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আপনি
যদি একজন ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ডায়েটে খাবারের তালিকায় জয়তুন
তেল অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
📌আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ডি যুক্ত ৫টি খাবার
ক্যান্সার প্রতিরোধে: জয়তুন তেল ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। কেননা এই
তেলে বিদ্যমান উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হতে বাধা
দেয়। আপনি যদি নিয়মিত জয়তুন তেল খেতে পারেন, তাহলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই
কমে যায়।
চর্মরোগে রোগের উপকারী: সাধারনত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা চিকিৎসার ক্ষেত্রে
এই তেল ব্যবহার করে থাকেন। কেননা এই তেল ব্যবহারে চর্ম রোগের বেশ ভালো উপকার
পাওয়া যায়। তাই এই তেল চর্ম রোগের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী হিসেবে ব্যবহার
করা হয়ে থাকে।
চুলের যত্নে: চুলের যত্ন এই তেলের রয়েছে উপকারিতার সমাহার। এই তেল নিয়মিত
মাথায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি চুলের গোড়া
মজবুত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এই তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের সৌন্দর্য
বৃদ্ধি পাবে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: জয়তুনের তেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা
করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশিফাই প্রেসার কমিয়ে
প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: এই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই
লক্ষ্য করা হয়। দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। এই তেল
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় খুবই উপকারী। এই তেল খাওয়ার ফলে দেহের কোষ্ঠকাঠিন্যের
সমস্যা ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়।
অতিরিক্ত ওজন কমাতে: জয়তুন তেল ওজন কমাতে ভূমিকা পালন করে থাকে। জয়তুন
তেল রান্না করে খাবারের সাথে খেলে দেহে চর্বি জমতে বাধা দেয় যার ফলে ওজন ধীরে
ধীরে কমে যায়। যারা ডায়েট করছেন তারা নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করুন তাহলে দেখবেন
আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়ার পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখবে।
জয়তুন তেলের অপকারিতা
প্রতিটা জিনিসেরই উপকারিতা থাকার পাশাপাশি সামান্য পরিমান হলেও অপকারিতা থাকে।
জয়তুন তেল অবশ্যই এর বিপরীত নয়। জয়তুন তেলের অপকারিতাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল-
- আপনার যদি ত্বক তৈলাক্ত হয়, তাহলে এই তেল ব্যবহারে ব্রণ হতে পারে।
- এই তেল পরিমাণে বেশি ব্যবহার করলে রক্তে শর্করার মাত্রার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা অত্যাধিক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।
গর্ভবতী বা স্তনদানকারী মহিলাদের এই তেল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে
পরামর্শ করে নিতে হবে। কেননা এই তেল অতিমাত্রায় খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। আশা
করছি জয়তুন তেলের অপকারিতাগুলো জানতে পেরেছেন। এবার চলুন জয়তুন তেল ব্যবহারের
নিয়ম জেনে নেই।
জয়তুন তেলের দাম
জয়তুন তেলের দাম বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে আমরা আমাদের বাংলাদেশে
এই তেলের দাম কত সেটা উল্লেখ করা হলো-
- ১ লিটার কাঁচের বোতলের দাম ১২৬০ টাকা থেকে ৩১০ টাকা
- ৫০০ গ্রাম কাঁচের বোতলের দাম ৭১০ টাকা থেকে ৭৬০ টাকা
- ২৫০ গ্রাম বোতলের দাম ৩৮০ টাকা থেকে ৪১০ টাকা
- ১০০ গ্রাম কাঁচের বোতলের দাম ১৬০ টাকা থেকে ২১০ টাকা
স্থানভেদে, গুণগত মান এব চাহিদার দিক দিয়ে দামে কমবেশি হতে পারে। আসলে এই তেলের
উপকারিতার কাছে দাম তেমন ম্যটার করে না। তবে এই তেল কেনার ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা
অবলম্বন করতে হবে কেননা আপনি যদি আসল তেল না কিনে নকল তেল কিনে ব্যবহার করেন
তাহলে এর উপকারিতা লক্ষ্য করতে পারবেন না।
এজন্য এর গুণগত মান ভালোমত যাচাই করে কিনতে হবে। কেননা কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা
বিভিন্ন ধরনের ভেজাল বা নকল তেল বিক্রি করছে। তবে আমি আপনাকে এ বিষয়ে সাহায্য
করতে পারি। চলুন তাহলে আমরা নিচের অংশ থেকে আসল জয়তুন তেল চেনার উপায় জেনে নেই।
জয়তুন তেল চেনার উপায়
আসল জয়তুন তেল চেনার সহজ উপায় হল তেলের ঘনত্ব। তেলটি অধিক ঠান্ডাস্থানে রেখে
দিলে এর ঘনত্ব বোঝা যায়। আর আরেকটি বিষয় খেয়াল করবেন আসল জয়তুন তেল আপনি যদি
ফ্রিজে রেখে দেন তাহলে কিন্তু সম্পূর্ণভাবে জমে যায় না বরং এর ঘনত্ব আরও বেড়ে
যায়। যদি ফ্রিজে রাখার পর খেয়াল করেন যে তেলের ঘনত্ব এর কোন পরিবর্তন হয়নি
তাহলে বুঝবেন সেই তেলটি নকল।
জয়তুন তেল চেনার আরেকটি উপায় হচ্ছে এই তেলের দাম। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি বিক্রি
করার জন্য নকল তেল কম দামে বিক্রি করে থাকে। কিন্তু মনে রাখবেন আসল তেলের দাম
অনেক বেশি হয়। কেউ যদি অনেক কম দামে তেল বিক্রি করেন তাহলে বুঝতে হবে তেলটি নকল।
আরো একটি চেনার উপায় হল তেলের বোতল দেখে। আসল তেল সবসময় মোটা কাঁচের বোতলে
বিক্রি হয়ে থাকে। এই তেল টিন বা প্লাস্টিকের বোতলে বোতলজাত করা হয় না। আশা করছি
উল্লিখিত বিষয়গুলো মাথায় রেখে বাজারে জয়তুন তেল ক্রয় করবেন।
জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম
বিভিন্ন রান্নায় জয়তুন তেল ব্যবহার করে খেতে পারেন। এই তেলের রান্না করে খেলে
আমাদের শরীর সুস্থ এবং সতেজ থাকবে। আপনি বিভিন্ন সালাদে এই জয়তুন তেল মিশিয়ে
খেতে পারেন। কেননা এই তেলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
আপনার ত্বক, চুল বা শরীরের অন্যেন্য স্থানে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই তেল ভালোমতো
ম্যাসাজ করে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে আপনার চুল ধীরে ধীরে ঘন ও লম্বা হতে থাকবে।
এছাড়াও জয়তুন তেল রুটির সাথেও খাওয়া যায়। তবে রুটির বানানোর সময় এই তেল মিশিয়ে
ব্যবহার করতে পারেন।
ফেসপ্যাক ও হেয়ার প্যাক হিসেবেও জয়তুন তেল ব্যবহার করা যায়। ত্বকের যত্নে এই
তেলের গুনাগুণ সবচেয়ে বেশি। এটি নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করতে পারলে ত্বক নরম এবং
কোমল হয়। এক্ষেত্রে দুই হাতে তালুতে তেল নিয়ে শরীরে ম্যাসাজ করতে হবে।
জয়তুন তেল কোথায় পাওয়া যায়
জয়তুন তেলের উপকারিতা, পুষ্টিগুন, এই তেল ব্যবহারের নিয়ম তো জেনে নিলাম কিন্তু
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে জয়তুন তেল কোথায় পাওয়া যায়? উত্তর খুবই সহজ। জয়তুন তেল
হচ্ছে বহুল প্রচলিত একটি তেল। এজন্য এই তেলের খোঁজ পেতে খুব বেশি হয়রান হতে হয়
না।
আপনি আপনার নিকটস্থ যেকোন সুপারশপ থেকে এই তেল সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে এখন
বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মেও জয়তুন তেল পাওয়া যাচ্ছে আপনারা চাইলে আপনার বিশ্বাস
অনলাইন প্লাটফর্ম থেকেও এই তেলটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
লেখকের শেষ মন্তব্যঃ জয়তুন তেলের উপকারিতা
আমরা আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জয়তুন তেল সম্পর্কে জানানোর বা তুলে ধরার
চেষ্টা করেছি। আমরা এখানে জয়তুন তেলের উপকারিতা আলোচনা করার পাশাপাশি জয়তুন তেল
চেনার উপায়, জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম ইত্যাদিসহ এর বিভিন্ন দিক আলোচনার
মাধ্যমে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি আপনারা জয়তুন তেল সম্পর্কে জেনে উপকৃত
হতে পেরেছেন।
জয়তুন তেল সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার
করে দিবেন। এতে তারাও এই জয়তুন তেল সম্পর্কে বিস্তারিত অজানা তথ্যগুলো জানতে
পারবেন। বিভিন্ন রোগ সম্পর্কিত অন্যেন্য প্রয়োজনীয় ও জরুরি তথ্য পেতে আমাদের
ট্রিক্সভিউ আইটি সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।
ট্রিক্সভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url