ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় (জানুন বিস্তারিত)
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠকবৃন্দ আশা করি আপনারা সকলেই ভালোই আছেন। আজকে আমরা
আপনাদের সামনে একটি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বা রোগের চিকিৎসা
সম্পর্কিত একটি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব সেটা হচ্ছেক্রিয়েটিনিন কত হলে
ডায়ালাইসিস করতে হয় সেই সম্পর্কে। তো আপনি কি এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানতে
চেয়ে আমাদের এই পোষ্টিতে এসেছেন? তাহলে আমাদের এই পোষ্টটি আপনার জন্য উপকার হতে
চলেছে।
তাই আপনারা যদি এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত অবহেলা না করে মনোযোগ দিয়ে পড়লে
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় জেনে নেওয়ার পাশাপাশি ক্রিয়েটিনিন
বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ, রক্তে ক্রিয়েটিনিন কত হলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়,
ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয় ইত্যাদি সম্পর্কে আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয়
যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ অজানা তথ্যগুলো আপনারা জানতে পারবেন। তাই আমার মনে হয়
একেবারেই অবহেলা না করে মনোযোগ দিয়ে এই পোষ্টটি পড়ে জেনে নেওয়া।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ
মানুষের শরীরে কিডনি কোথায় থাকে
আমরা হয়তো জানি যে আমাদের দেহের প্রধান রেচন অঙ্গ হলো বৃক্ক বা কিডনি। একজন
মানুষ দিনে প্রায় ১৫০০ মিলিলিটার মূত্র ত্যাগ করেন। এই কাজটি সম্পন্ন হতে
বৃক্ক বা কিডনি সাহায্য করে থাকে। কিডনির সাহায্যে আমাদের শরীর থেকে
মুত্রের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায়।
যেমন:
- ইউরিয়া
- ইউরিক এসিড
- অ্যামোনিয়া
- ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি।
এগুলো আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর পদার্থ। ইসব অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর
বর্জ্য পদার্থ আমাদের মূত্রের মাধ্যমে অপসারণে কিডনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। বৃক্ক বা কিডনির ভেতরের নেফ্রন একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে
মূত্র উৎপন্ন করে।
মানুষের শরীরে কিডনি কোথায় থাকে? তা এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক। বৃক্ক বা কিডনি
মানব দেহের উদর গহবরের পেছনের অংশে অবস্থিত। মেরুদন্ডের ২ দিকে, বক্ষ পিঞ্জরের
নিচে, পৃষ্ঠপ্রাচীর সংলগ্ন অবস্থায় ২ টি বৃক্ক অবস্থান করে। প্রতিটি বৃক্কের
আকৃতি মুলত শিম বিচির মত এবং রং লালচে হয়।
ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ
একটি প্রাকৃতিক বিষয় হচ্ছে মানবদেহে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা।
আমরা খুব সহজেই নিজে থেকে চাইলেও বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে থাকতে পারিনা। জন্ম
থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়ে
থাকি। আমাদের দেহ রোগে আক্রান্ত হওয়াটা একেবারেই প্রাকৃতিক বিষয়। তবে এইটা
ভেবে কিন্তু অসচেতনভাবে থাকা যাবে না।
আমরা যদি একটু সচেতন থাকি তাহলে কিন্তু আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে থাকতে
পারবো সহজেই। আপনারা অনেকেই ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ জানতে চেয়েছেন।
রক্তে ক্রিয়েটিনিন পরিমাণ বেড়ে গেলে দেহে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমনঃ
- মাথা ঘোরা
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
- বুকে ব্যথা হওয়া
- শারীরিক দুর্বলতা
- শরীর ফুলে যাওয়া
- পায়ে পানি আসা
- ওজন কমে যাওয়া
- ঘন ঘন প্রসাব হওয়া
- রক্তস্বল্পতা দেখা দেওয়া
- বমি বমি ভাব হওয়া
- অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ
- প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া
- খাবারের স্বাদ না পাওয়া
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়া
- ক্ষুধা মন্দা দেখা দেওয়া
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া
- চোখের পাতা ফুলে যাওয়া
- জ্বর জ্বর ভাব অনুভব হওয়া
- শরীরের ঘাম বেশি বের হওয়া ইত্যাদি।
আশা করছি আপনারা এই অংশ থেকে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে
ধারণা পেয়েছেন। এসব লক্ষণ আপনার দেহে দেখা দিলে সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ
ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। এবার চলুন, ক্রিয়েটিনিন কত হলে
ডায়ালাইসিস করতে হয় সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
আপনারা অনেকেই এই প্রশ্নটি প্রায় অনেকেই চিন্তা করেন রক্তে ক্রিয়েটিনিন
এর পরিমাণ বৃদ্ধি হলেই কি ডায়ালাইসিস করতে হয়? ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা
কত হলে মূলত ডায়ালাইসিস করতে হয় এ বিষয়গুলি আসলেই সকলেরই জানা অত্যন্ত
প্রয়োজন। তাই আমরা পোষ্টের এই অংশে এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। তাহলে
চলুন ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় তা জেনে নেই।
📌আরো পড়ুন 👉 মেডিকেল আনফিট হলে করণীয় 2024
কিডনি বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, কিডনি বা বৃক্ষতে সমস্যা হলেই যে ডায়ালাইসিস করতে
হবে বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। আবার আপনারা অনেক মনে করেন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের
মাত্রা কিছুতা বাড়লে ডালাইসিস করতে হয়। তবে এটি একাবারেই ভুল
সিদ্ধান্ত। শুধুমাত্র ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে ডায়ালাইসিস
করার কোন সম্পর্ক নেই।
কিন্তু যদি বাচ্চাদের ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ২ এবং প্রাপ্তবয়স্ক দের মাত্রা
৫.০ মিগ্রা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে উক্ত রোগীকে ডায়ালাইসিস
করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা
বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু দিক নজর রেখে ডায়ালাইসিস করানোর সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করা হয়। যেমন: জিএফআর (GFR)।
জিএফআর (GFR) হল গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেট এর সংক্ষিপ্ত রূপ। কিডনির
ক্রিয়েটিনিন ফিল্টারের কার্যকারিতা নির্ধারণ করার মাধ্যম হলো জিএফআর।
গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন রেটের স্বাভাবিক মাত্রা হলো মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতি
মিনিটে ৭৫ থেকে ১১৫ মিলি থাকে এবং পুরুষের ক্ষেত্রে এর মাত্রা ৮৫ থেকে ১২৫
মিলি থাকে। জিএফআর (GFR) এর মান কমে গেলে এবং বেড়ে গেলে চিকিৎসকরা রোগীকে
ডালাইসিস করানোর পরামর্শ দেন।
রক্তে ক্রিয়েটিনিন কত হলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়
স্বাভাবিক মহিলাদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা যদি থাকে ০.৫ থেকে
১.১ মিলিগ্রাম পর্যন্ত এবং স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে
ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা থাকে ০.৬ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত। মূলত আমাদের
সকলের দেহে ২ টি কিডনি থাকে। তবে যাদের দেহে কোন কারণে একটি কিডনি অকেজো বা
থাকে না তাদের রক্তে প্রতি ডেসিলিটারে ক্রিয়েটিনিনের মান ১.৮
মিলিগ্রাম।
ছেলে মেয়েদের রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মান থাকে মুলত ০.৫ থেকে ১.০।
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং মহিলাদের রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর মান ৫.০ এবং শিশুদের
শরীরে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মান ০.৩ থেকে ০.৭ মিগ্রা থাকে। রক্তে যদি
ক্রিয়েটিনিনের এই মাত্রাগুলো বেড়ে যায়। তাহলে সেক্ষেত্রে কিডনি নষ্ট
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কিডনি কিভাবে রক্ত পরিশোধন করে
কিডনিকে আমাদের দেহের ছাঁকনি বলা হয়। কিডনির মূল কাজ হচ্ছে আমাদের শরীরের
রক্ত থেকে বিভিন্ন ধরনের খারাপ বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে বের করা। আমাদের দেহে
কিডনি হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। প্রতিদিন কিডনি আমাদের দেহ থেকে
প্রচুর পরিমাণ রক্ত পরিশুদ্ধ করে। প্রতিদিন কিডনি আমাদের দেহ থেকে ২০০
কোয়ার্টস রক্ত থেকে ২ কোয়ার্টস দূষিত পদার্থ পানি বের করে দেয়।
এই সকল দূষিত পদার্থ আমাদের দেহে জমা থাকলে নানান ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে।
শরীর থেকে দূষিত পদার্থগুলো বৃক্ক বা কিডনি যদি অপসারিত না করতে পারে। তাহলে
আমাদের দেহে দূষিত পদার্থ গুলো বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শরীরকে ধ্বংস করে দেয়।
এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। যেমন: খাবারের প্রতি অরুচি দেখা যায়,
বমি বমি ভাব হয়।
প্রস্রাব হতে সাধারনত ভিটামিন এবং প্রোটিন বের হওয়া আবার প্রস্রাব বন্ধ হয়ে
যাওয়া ইত্যাদি। বৃক্কের ইউরিনিফেরাস (Uriniferous) নালিকার এক বিশেষ
অংশ কাজ করার একককে নেফ্রন বলা হয়। এক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে আমাদের
দেহের প্রতিটি বৃক্কে মোটামুটি ৮ থেকে ১০ লাখ নেফ্রন বিদ্যনান রয়েছে। একটি
জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনাগতভাবে দেহে মূত্র উৎপন্ন করে।
মূত্র উৎপন্ন হওয়ার পরে সংগ্রাহী নালিকার সাহায্যে কিডনির পেলভিসে যায়
এবং এরপর পেলভিস থেকে ইউরেটরের ফানেল নামক প্রশস্ত অংশ হয়ে ইউরেটারে প্রবেশ
করে। ইউরেটার হতে মূত্রগুলি অনাগতভাবে মূত্রথলিতে আসে এবং তা সাময়িকভাবে জমা
থাকে।
ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়
আপনারা অনেকেই জানতে চান যে, ডায়ালাইসিস সাধারনত কতদিন পর পর করতে হয়।
আমাদের কিডনি অকেজো হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ায় রক্ত পরিশোধিত করতে
হয়। এর জন্য আমাদের প্রথমে ডায়ালাইসিস কি? সেই বিষয়ে জানতে হবে। মূলত বৃক্ক
সম্পূর্ণ বিকল হওয়ার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশোধিত করার প্রক্রিয়াকেই
ডায়ালাইসিস বলা হয়।
ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে দেহের রক্ত পরিশোধিত করা হয়। এ মেশিনের
ডায়ালাইসিস টিউবটির এক প্রান্ত রোগীর হাতের ধমনীর সাথে এবং অন্য প্রান্ত
কব্জির শিরার সাথে সংযোগ করা হয়। ধমনী থেকে রক্ত ডায়ালাইসিস এর মধ্য দিয়ে
প্রবাহিত করানো হয়। এর প্রাচীর আংশিক বৈষম্য হওয়ার ফলে ইউরিক অ্যাসিড,
ইউরিয়া সহ অন্যান্য ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে।
এভাবেই কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষতিকর
বর্জ্য পদার্থ বাইরে নিষ্কাশন করা হয়। তবে এটি একটি ব্যয়বহুল এবং সময়
সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এবার আসুন জেনে নেই কতদিন পর পর ডায়ালাইসিস
প্রক্রিয়াটি করতে হয়? যে সকল কিডনি রোগীদের অনেক গুরুতর অবস্থা হয়ে থাকে
তাদেরকে সারা জীবন ডালাইসিস করাতে হয়।
যাদের কিডনি খুব খারাপের দিকে যায়নি, তাদের ক্ষেত্রে মাত্র কয়েক বার
ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়াটি গ্রহণের পরপরই আর ডায়ালাইসিস করাতে হয় না। কিডনি
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রত্যেক সপ্তাহে কিডনি রোগীদের ২ থেকে ৩ দিন ডায়ালাইসিস
করতে হয় এবং এর পাশাপাশি প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে রক্ত পরিশোধিত করা হয়।
লেখকের ইতিকথা
ইতিমধ্যে আমরা ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এবং
ডায়ালাইসিস নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আলোকপাত করেছি। আপনারা হয়তো
ডায়ালাইসিস সম্পর্কে এতক্ষণে ক্লিয়ার ধারণা পেয়ে গেছেন। তবে আপনার যদি
এই ডায়ালাইসিস বা এই পোষ্ট নিয়ে কোন ধরণের মতামত বা প্রশ্ন থাকে তাহলে
অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন তাহলে আমরা সেই অনুযায়ী উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলটি
ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এতে তারাও এই ডায়ালাইসিস
বিষয়ে বিস্তারিত অজানা তথ্যগুলো জেনে নিতে পারবেন। বিভিন্ন সাস্থ সম্পর্কিত
অন্যেন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
ধন্যবাদ।
ট্রিক্সভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url